বাংলাদেশ ডেস্ক | শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট | 15 বার পঠিত

হেমন্ত ও শীতের সন্ধিক্ষণে বাংলার প্রকৃতি। প্রিয় পাঠক, সহযোগী ও শুভানুধ্যায়ী– ঋতুচক্রের মধুর এই সময়ে আমাদের ভালোবাসা নিন।
আপনাদের ২০ পেরিয়ে ২১ বছরে। বাংলাদেশও এখন পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকে এই পরিবর্তনের সূচনা। তাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এবারের প্রতিপাদ্য গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা।
আমরা বলেছি– মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে পাথেয় করে নিজস্ব লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এই লক্ষ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা।
এই স্বাধীনতা-যাত্রায় গণতন্ত্রই হতে পারে আমাদের নির্ভরযোগ্য বাহন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের পথে এগোতে শুরু করেছে। আলোচিত ও আকাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকার একটি আদেশ জারি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও সংস্কার নিয়ে নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
আমরা আবারও গণতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব করে তুলতে চাই। সত্যিকার গণতন্ত্রে কথা বলা বা নির্ভয়ে সত্য তথ্য প্রকাশের অধিকার কোনো বিশেষ সুযোগ নয়– এটি এমন এক ব্যবস্থা, যা পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সতেজ রাখে। এটি এমন এক সক্রিয় হাতিয়ার, যার মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিরোধী দলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে। অন্যায়কে মোকাবিলা করতে পারে এবং সম্মিলিতভাবে ইতিহাসের গতিপথও নির্ধারণ করে দিতে পারে।
তবে ভার্চুয়াল কোলাহলের এই সময়ে ব্যক্তির প্রকাশ করা মতামতে অনেক সময় ভুল বা অপতথ্য যুক্ত থাকে। এর থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তি সমাজ ও রাষ্ট্রে বড় বিভাজনও তৈরি করছে। ফলে এই মৌলিক অধিকারটি গুরুতর অপব্যবহারের ঝুঁকিতে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমের এমন ব্যবহার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাঝে যে সীমারেখা, তাকে ফিকে করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সংবাদমাধ্যমকে সত্যের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হবে। সে কাজটি নিরলসভাবে করে যেতে চায়।
আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন যে সরকার দায়িত্ব নেবে, তাকে প্রলোভন এবং প্রতিহিংসা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে ঔদ্ধত্য সমালোচনাকে স্তব্ধ করতে চায়, তার রাশ টেনে ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজন সুরক্ষা ও স্বাধীনতা। এ জন্য সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বা দলনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম শেষ পর্যন্ত কারও কাজে আসে না। অতীতে অনেকবারই আমরা এর প্রমাণ দেখেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এই চিত্র আরও স্পষ্ট।
বাংলাদেশ এখন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সামনে অপেক্ষমাণ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন। এই প্রেক্ষাপটে যদি মুক্তভাবে কথা বলা, লেখা ও ভিন্নমত প্রকাশ করা না যায়, তাহলে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিশ্রুতি কার্যকর করা যাবে না।
অতীতে আমরা দেখেছি, সংলাপের পরিবেশ এবং মতভিন্নতা প্রকাশের উন্মুক্ত পরিবেশ না থাকলে নির্বাচিত সরকারও স্বৈরাচারী শক্তিতে রূপ নেয়। আবারও এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হলে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির প্রতি নাগরিকদের আস্থা কমে যেতে পারে। বলা বাহুল্য, মানুষ যখন নির্ভয়ে কথা বলতে পারে; সাংবাদিকরা বাধা ছাড়া সত্য অনুসন্ধান করতে পারে; প্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহিমূলক হয়, তখন গণতন্ত্র নিজেই নবায়িত হতে থাকে।
গণতন্ত্র কেবল নির্বাচন নয়। এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ, ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার বিষয়। ভোটাধিকার হ্রাসের মতো পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করে। আর এটি ঘুরেফিরে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
প্রিয় পাঠক, আপনার সচেতনতা এই রূপান্তরের চলমান সময়টিকে জাতীয় মোড় পরিবর্তনের সুযোগে পরিণত করতে পারে। এটিকে কেবল রাজনৈতিক মতাদর্শের জায়গা থেকে না দেখে সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক, শ্রবণক্ষম এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষাকারী গণতান্ত্রিক সমাজ পুনর্গঠনের পথ ও পাথেয় বিনির্মাণের মুহূর্ত হিসেবে দেখার প্রত্যাশা করছি।
Posted ৪:৪২ পিএম | শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।